ক্রমবর্ধমান সময়ে আমরা সকলেই অনেকটা সময় ব্যয় করি অনলাইন আর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি প্রতিদিন আমরা যে সময়টা ব্যয় করছি তা কি আদোও কোনো কাজে লাগছে কি না।
এরইমাঝে নতুন এক ডিজিটাল দুনিয়ায় আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। সেই দুনিয়ায় নাম মেটাভার্স। আজ আপনাদের মেটাভার্স এর জগৎ নিয়ে কিছু জানাবো।বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে জানবার অনুরোধ করছি।
আপনি আজকের এই ব্লগ পোস্টটি পড়ছেন আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে কিংবা কম্পিউটার স্ক্রিনে। তবে সেদিন আর খুব বেশি দূরে নেই যখন আপনি স্ক্রিনের বাইরে থাকবেন না চলে যাবেন স্ক্রিনের ভিতরে।
কী আপনার কি এসব বিশ্বাস হচ্ছেনা! আপনি কি জানেন ২০৩০ সালের মধ্যে এমনটাই হতে চলেছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ এরকমই কিছু করতে যাচ্ছে।
মার্ক জুকারবাগ এরকমই একটি পরিকল্পনা করছে যার একটি নামও রয়েছে মেটাভার্স। ফেসবুক কোম্পানি ইতোমধ্যে তাদের নামও পরিবর্তন করে ফেলেছে যার নাম মেটা।
কিন্তু কি এই মেটাভার্স! আপনি কি এর সম্পর্কে জানেন? সংক্ষেপে মেটাভার্স বলতে বুঝায় একটি ভার্চুয়াল দুনিয়া।
যেখানে কৃত্রিম ভাবে আপনি সবকিছু করতে পারবেন যা আপনি বাস্তব জীবনে করছেন।মেটাভার্সের সবকিছুই আপনার বাস্তব মনে হবে কিন্তু তা আসলে বাস্তব নয়।
আরও পড়ুন:
মেটাভার্সের স্রষ্টাদের দাবি অনুসারে মেটাভার্স একটি ভার্চুয়াল জগৎ। যার মাধ্যমে আমরা এখনকার সময়ের চেয়ে একে অন্যের সাথে আরও কানেক্টেড থাকতে পারবো।
সেই মেটাভার্স জগতে প্রত্যেক মানুষের একটি এবেটার থাকবে তার মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।মনে করুন আপনি একটি মিটিং করবেন।
যেখানে মিটিংটি আপনার ভার্চুয়াল এবেটার এর সাথে অন্য ব্যক্তির এবেটার করবে।যেটি বাস্তব মিটিং এর মত দেখাবে।
শুধু তাই নয় মেটাভার্সে থাকবে ভার্চুয়াল কয়েন যার মাধ্যমে আপনি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্য কিনতে পারবেন।বিভিন্ন ভার্চুয়াল জিনিস কেনাবেচা চলবে সেখানে।
মেটাভার্সে থাকবে রিওয়ার্ড ব্যবস্থা এতে অনেক মানুষ এতে বারবার ঢুকবে। এখানে যত মানুষ বারবার ঢুকবে এর মার্কেটপ্লেস তত বড় হবে।
প্রিয় ব্যান্ড এর কনসার্ট দেখতে মন চাচ্ছে তাহলে বিয়ার হ্যান্ডসেট পড়ে বসে পড়ুন লাইভ কনসার্ট দেখতে।
লাইভ কনসার্টের ফিল দিতে মেটাবার্স প্রস্তুত। যদিও কথাগুলো খুবই আধুনিক এবং আকর্ষনীয় শোনাচ্ছে। মনে হচ্ছে বিষয়টিতো দারুন। একটু ধৈর্যসহকারে ব্লগটি পড়ুন তাহলেও আসল বিষয় বুঝতে পারবেন।
আমেরিকায় ৬৬% ইউজার এক্টিভ ভিডিও গেইমার। সেখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় গেইম এর মধ্যে একটি হলো রবলক্স।
এই গেমটি মেটাভার্সের খুবই বেসিক একটি ভার্সন বলা যায়। এই গেইমে আপনার একটি ক্যারেক্টার থাকবে যার মাধ্যমে আপনি আপনার ভার্চুয়াল দুনিয়া সাজাবেন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আপনার সবকিছু কেনাবেচা করবেন।
বাস্তব জীবনে যা প্রয়োজন তার মতো ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও সেগুলো নিজের অর্থ ব্যয় করে কিনতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন আপনার ভার্চুয়াল কয়েন।
এই ভার্চুয়াল কয়েনের মাধ্যমে রবলক্স শুধুমাত্র ২০২১ সালে আয় করেছে ৬৫২.৩ মিলিয়ন ডলার। ভার্চুয়াল দুনিয়া নিয়ে এত বলার কারণ নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। কাড়ি কাড়ি টাকা রয়েছে এখানে।
ফেইসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের উদ্দেশ্য ইউজারকে বেশি সময় স্ক্রিনে ধরে রাখা। কারণ কিন্তু খুব সহজ যত বেশি সময় ইউজার স্ক্রিনে থাকবে ততবেশি এড এবং ততবেশি রেভিনিউ।
বর্তমানে আমেরিকায় একজন মানুষ দৈনিক সাত ঘন্টা ব্যায় করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। সময়টা অনেক, কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ এর মত বড় বড় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা চান আরো বেশি সময় ইউজার স্ক্রিনে থাকতে।
কারণ যত বেশি সময় ইউজার স্ক্রিনে থাকবে ততো বেশি টাকা। বিষয়টি ভাবতে পারছেন একজন মানুষকে এই সাইবার জগতে নিয়ে আসতে কতো কিছুই করছে তারা। সাত ঘন্টা থেকে চব্বিশ ঘণ্টা, মেটাভার্সের ধারণা এইখান থেকেই।
জাকারবার্গের মত এরকম একজন প্রতিষ্ঠাতা শুধুমাত্র ২০২২ সালে মেটাবার্সের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তিনি চাচ্ছেন আপনার আমার পুরো জীবনকে তার কব্জায় নিয়ে আসতে।
আপনার আসে পাশের দিকে থাকান লাখ কোটি মানুষের চোখ আর বাস্তব দুনিয়ায় নেই।ফোন বা কম্পিউটার এর স্ক্রীনে লেগে আছে।
ঘন্টার পর ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করছে। এখনোতো মেটাভার্স আসেনি তাতেই এমন অবস্থা। তাহলে বুঝুন মেটাভার্সের মাধ্যমে যখন আরো ভালো সুবিধা পাবে মানুষ তখন মানুষের অবস্থা কী দাঁড়াবে।
অন্য কোনো জগতে বিভোর থাকবে সবাই। যে জগতের কোনো অস্তিত্ব নেই। কোটি টাকার জিনিসের বেচাকেনা হবে কিন্তু তার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
সেখানে থাকা কোনো কিছুই আপনার আমার নয় সব থাকবে মেটাভার্সের। কিন্তু আপনি আমি সেখানে ক্ষনিকের আনন্দের জন্য নিজের কষ্টে উপার্জিত টাকা দেবো।কিন্তু লাভ হবে মেটাভার্সের।
আমরা বাস্তব দুনিয়া ছেড়ে ওই দুনিয়ায় বিভোর থাকবো। সেই দিন বেশি দূরে নেই। মেটাভার্স তার নিজস্ব গতিতে আগাচ্ছে। তাই সময় থাকতে নিজেকে বাঁচান,আপনার পরিবার ও আত্মীয়দের এর খারাপ দিক সম্পর্কে ধারণা দিন এবং সচেতন থাকুন।