ঘুমের তারতম্য স্বাস্থ্যের যেসব ক্ষতি করে!
ঘুম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ এবং এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এবং আমাদের কর্মোঠ রাখার জন্য অবশ্যক।
তবে আমাদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে ঘুমের তারতম্য করা যাবেনা বা ঘুমের মধ্যে বেলেন্সিং রাখতে হবে।
ঘুমের অভাব বা খুব বেশি ঘুম আমাদের শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা খুব কম বা খুব বেশি ঘুমায় তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং বিষণ্নতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তাই ঘুমের জন্য একটি সঠিক নিয়ম ও সঠিক সময় নির্বাচন করতে হবে। এতে আপনার স্বাস্থ্য ঠিক থাকার পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজে প্রডাক্টিভিটি বা উৎসাহ বৃদ্ধি পায়ে।
প্রায় ১৫৩টি গবেষণা পর্যালোচনা করার মাধ্যমে জানা যায় , পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে মানুষের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ওজন বৃদ্ধির মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন:
খুব কম ঘুমানো, যা ঘুমের (Sleep deprivation) নামেও পরিচিত,আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
যখন আমরা ঘুমাই, আমাদের শরীর বিশ্রাম নেয় এবং রিচার্জ করে, যা আমাদেরকে স্বতেজ এবং দিনের জন্য প্রস্তুত বোধ করে জেগে উঠতে সহায়তা করে।
যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম পাই না, তখন আমাদের শরীরে নিজেদের মেরামত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না এবং এটি শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
ঘুমের অভাবের সাথে যুক্ত সবচেয়ে সাধারণ শারীরিক সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হলো উচ্চরক্তচাপ। ঘুমের অভাব ক্ষুধা এবং বিপাক নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলিকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় এবং বিপাক হ্রাস পায়।
এটি লোকেদের অতিরিক্ত খাওয়ার কারণ হতে পারে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি এবং অবশেষে স্থূলতা দেখা দেয়।
ঘুমের অভাব ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
শরীরের গ্লুকোজ প্রক্রিয়া করার ক্ষমতা ইনসুলিন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম পাই না, তখন আমাদের শরীর ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঘুমের অভাব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার সাথেও যুক্ত হয়েছে। যখন আমরা ঘুমাই, আমাদের শরীর শিথিল হয়, এবং আমাদের হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ কমে যায়।
যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম পাই না, তখন আমাদের শরীর চাপের অবস্থায় থাকে, যার ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শারীরিক সমস্যা ছাড়াও, ঘুমের অভাব আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ঘুমের অভাব বিরক্তি, মেজাজের পরিবর্তন এবং মনোযোগ দিতে অসুবিধা হতে পারে।
এটি উদ্বেগ এবং বিষণ্নতাও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, একটি ঘুমের ব্যাধি যা ঘুমাতে বা ঘুমানোয় অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাদের বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় এখানে দেওয়া হলো:
• একটি নিয়মিত ঘুমের সময়সূচীতে থাকুন, নিয়ম করে সঠিক সময়ে ঘুমাতে যান।• একটি আরামদায়ক ঘুমানোর আগের রুটিন তৈরি করুন, যেমন গরম পানির গোসল করা বা বই পড়া।
• ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার সীমিত রাখুন।
• ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।যেমন-চা,ধূমপান করা ইত্যাদি।
• নিশ্চিত করুন যে আপনার ঘুমের পরিবেশ আরামদায়ক, শীতল এবং শান্ত।
• নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমের সময়ের কাছাকাছি তীব্র ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
• ঘুমের সমস্যা অব্যাহত থাকলে চিকিৎসকের সাহায্য চাওয়ার কথা বিবেচনা করুন।
অতিরিক্ত ঘুমের অপকারীতা কী?
যদিও পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নেওয়া অপরিহার্য, অতিরিক্ত ঘুম যথেষ্ট ঘুম না পাওয়ার মতোই খুবই ক্ষতিকর।
যারা খুব বেশি ঘুমান তাদেরও শারীরিক সমস্যা যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অতিরিক্ত ঘুম শরীরের স্বাভাবিক ছন্দকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি এবং বিপাকীয় সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শারীরিক সমস্যা ছাড়াও, অতিরিক্ত ঘুম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যারা খুব বেশি ঘুমায় তারা অলসতা এবং ক্লান্তির অনুভূতি অনুভব করতে পারে, যা হতাশা এবং উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘুম বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে জ্ঞানীয় হ্রাস এবং স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার ঝুঁকির সাথেও যুক্ত করা হয়েছে।
সুতরাং, আমরা সঠিক পরিমাণে ঘুম পাচ্ছি তা নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি? প্রথম ধাপ হল নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী স্থাপন করা।
বিছানায় যাওয়া এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা শরীরের স্বাভাবিক ঘুম-জাগরণ চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করাও অপরিহার্য ঘরটি অন্ধকার এবং শান্ত হওয়া উচিত। আরামদায়ক বিছানা এবং বালিশে বিনিয়োগ করা আপনার ঘুমের মানও উন্নত করতে পারে।
ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দেওয়াও আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট দ্বারা নির্গত নীল আলো শরীরের স্বাভাবিক ঘুম-জাগরণ চক্রকে ব্যাহত করতে পারে, ঘুমিয়ে পড়া কঠিন করে তোলে।
ঘুম আমাদের সারাদিন কাজ করতে প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারে। ঘুমের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত দিন ফুরফুরে সময় কাটে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘুমও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে নিয়ম মেনে ঘুমাতে যেতে হবে এবং ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করতে হবে।
আজ এ পর্যন্তই, আমাদের এই তথ্য গুলো ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন এতে অন্যের উপকারে আসবে।